বুক ধড়ফড় করার কারণ। বুক ধড়ফড় দূর করার উপায়

বুক ধড়ফড় করার কারণ। বুক ধড়ফড় দূর করার উপায়


আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠকগণ আমরা জেনে থাকি যে আমাদের শরীরে সময়ে অসময়ে বুকের হৃৎ কম্পনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াকেই বলে প্যালপিটেশন। আর আমাদের গ্রাম এলাকায় কেউ বলে  থাকেন বুক ধর ফড়।আবারো কেউ কেউ বলে থাকেন বুক ধুক পুক করছে অথবা বুক লাফাচ্ছে। আসলে মানব দেহ এক অপার বিস্ময়। এর কর্ম প্রতিক্রিয়া গতি -প্রাকৃতিক ধরণ আরো বেশি বিস্ময় করে। আসুন আমরা জেনে নেই বুক ধর ফড় করার কারণ, কি কারনে বুক ধর ফড় করে , বুক ধর ফড় কি ওষুধ খেলে ভাল হয়, এবং সে ওষুধের দাম কত ইত্যাদি সমস্ত কিছু নিচে দেওয়া হলো:-

বুক ধর ফড় করার কারণ

বুক ধরফর করার অনেকগুলো কারণ রয়েছে সেগুলো ভিতরে কিছু কারণ। নিচে কয়েকটি কারন উল্লেখ করা হলো:-

১,অতিরিক্ত দৌড় ঝাপ করলে।

২,অতিরিক্ত আবেগ উচ্ছ্বাস করলে।

৩.অতিরিক্ত মাত্রায় পরিশ্রম করলে।

৪.সিঁড়ি বেয়ে কোন উঁচু জায়গায় উঠলে।

৫.বেশি খেলাধুলা করলে।

৬.অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যায়াম করলে।

৭.অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে।

এই সমস্ত কারণগুলো যদি অতিরিক্ত মাত্রায় কেউ করে ফেলে তাহলে অবশ্যই তার বুকের ভিতর ধর ফড় করবে। আমরা এই সমস্ত গুলো যদি করে থাকি তাহলে সঠিক ও নির্দিষ্ট মাত্রায় করবো তাহলে আমাদের এই সমস্যাটা সৃষ্টি হবে না।

বুক ধড় ফড় করলে কি করবেন

হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলে এই বুক ধড় ফড় করার সমস্যাটি দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে কোনমতেই উত্তেজিত অথবা চিন্তিত  হওয়া যাবে না বরং মনকে শান্ত রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে। আমাদের অনেকের ওই মাঝে মাঝে বুক ধড় ফড় করে। তবে আমরা অনেকেই এই বিষয়টা ছোটখাটো সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যাই। অতিরিক্ত মাত্রায় বুক ধড় ফড় করা এই সমস্যাটা হলে সময় নষ্ট না করে রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। আর যাদের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ,ডায়াবেটিস অথবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরিবারের কোন মৃত্যুর ইতিহাস আছে তাদের জন্য বুক ধড় ফড় করাটা একটি সতর্ক বাণী। এজন্য বুক ধড় ফড়  করলে অবহেলা করা উচিত নয়।যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে এবং  ডাক্তারের পরামর্শ ও ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পরিমাণ মতো ওষুধ সেবন করতে হবে।

বুক ধড় ফড় থেকে দূরে থাকার উপায়

বুক ধড় ফড় এর বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন হৃদ স্পন্দন বেড়ে যাওয়া ও বুক ধড় ফড় করা সমস্যা প্রতিরোধ করতে প্রতিদিনই আমাদের শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করা অবশ্যই প্রয়োজন। প্রতিদিন নিয়ম করে শরীর চর্চা করলে অন্যান্য অনেক রোগের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়াও স্ট্রেস, চিন্তা ও অবসাদের মত মানসিক সমস্যাও অনেক কমে যায়। এছাড়া প্রতিদিনই প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এছাড়াও অতিরিক্ত মাত্রায় কোন কষ্টের অথবা চাপের কাজ করা যাবে না। এবং মানসিক চিন্তা করা যাবে না কারণ   অতিরিক্ত মানসিক চিন্তা করলে বুকের ধড় ফড় অথবা বুকের ব্যথা বেশি পরিমাণে হয়। এই সমস্ত উপায় গুলো অবলম্বন করলেই বুক ধড় ফড় এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন।

পেটে গ্যাস হলে কি বুক ধর ফড় করে

পেটে গ্যাস হলে আমাদের  বুক ধরফরের চাপ বোধ হয়।  এছাড়া পেটে যদি গ্যাস হয় তাহলে অন্য রোগও হতে পারে যেমন হৃদরোগ। তবে গ্যাস হলে বুক ধড় ফড় করে কারণ পেটে যখন গ্যাস জমা হয় তখন বুকে জ্বালা পোড়া করে ও নিঃশ্বাস নিতে অনেকটা কষ্ট হয়ে যায়। আর যখন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে তখন বুকের ভিতর একটু ধর ফড় করবেই। তবে আপনার যদি নিয়মিত অতিরিক্ত মাত্রায় গ্যাস অনুভব হয় তাহলে আপনি অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন কারণ পেটের গ্যাস থেকে অন্য বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে এটি অন্য ভয়াবহ রোগের বাহক।

বুক ধড় ফড় করা কোন রোগের লক্ষণ

বুক ধড় ফড় এই সমস্যাটি কোন মতে এড়িয়ে যাবেন না কারণ এটি একটি  মারাত্মক রোগের লক্ষণ যেমন হৃদরোগ। এই বুক ধড় ফড় সমস্যাটি হৃদরোগের কারণ হতে পারে। পরবর্তীতে যে কোন সময়ে কোন প্রকার  হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর হৃদরোগ একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগটি যদি আপনার শরীরে বাসা বাঁধে তাহলে আপনার বেঁচে থাকার আশঙ্কা অনেকটাই কমে আসবে।

এজন্য আপনি যদি এই সমস্ত রোগ বালাই থেকে দূরে ও এড়িয়ে চলতে চান তাহলে আপনার শরীরে কোন লক্ষণ দেখা দিলেই শীঘ্রই নিকটস্থ হসপিটাল এবং ক্লিনিকে গিয়ে ওই সমস্যাটির কথা ডাক্তারকে খুলে বলুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগটি পুরাপুরি আপনার দেহে বাসা বাঁধার আগেই ধ্বংস করে ফেলুন। এতে আপনিও সুস্থ থাকবেন এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যও সুখে  থাকবে।

বুক ধড় ফড় এর ঔষধ

বুক ধড় ফড়  এর কারণ জেনে তা প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা সম্ভব। এছাড়া বুক ধড় ফড় এর ঔষধ ও রয়েছে। এর ভিতর কিছু ওষুধের নাম যেমন, ইনডেভার ট্যাবলেট ১০ মিলিগ্রাম ও জোলিয়াম (.২৫ মিলিগ্রাম) ট্যাবলেট।এই ঔষধ দুইটি বুক ধড় ফড় সমস্যার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ও  কার্যকরী একটি ঔষধ। এই ওষুধগুলো আপনি সেবন করলে এই বড় ধরনের সমস্যা থেকে অবসান পেতে পারেন। আরbএ ওষুধ গুলোই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করবে।  

বুক ধড় ফড় এর ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

বুক ধড় ফড় এর সবচেয়ে বড় ঔষধ হচ্ছে তার নিজের মন। বুক ধড় ফড় এর সময় যদি আপনি আপনার নিজের মনকে শান্ত করতে না পারেন, বেশি উত্তেজিত বা চিন্তিত হয়ে পড়েন তাহলে আপনার গুরুতর সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এজন্য বুক ধড় ফড় এই সমস্যাটা দেখা দিলে আপনি আপনার মনকে শান্ত রাখুন। আর এই সমস্যাটি দেখা দিলে এর কিছু ওষুধ রয়েছে যেমন ইনডেভার ট্যাবলেট ১০ মিলিগ্রাম এটি এক পিস করে রাতে সেবন করুন।

আর যদি আপনাকে বেশি আতঙ্কিত অথবা বেশি সমস্যা মনে হয় তাহলে রাতে জোলিয়াম (.২৫মিলিগ্রাম) ট্যাবলেট একটি করে ওই  ট্যাবলেটের সাথে সেবন করুন। আর এই ট্যাবলেট গুলি ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত সেবন করবেন। অনিয়মিত সেবন করবেন না কারণ অনিয়মিত সেবন করলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো দেখা দেবে এতে আপনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তাছাড়া আপনার আশে পাশের কোন ক্লিনিকের অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করবেন।

গর্ভবতী নারীর বুক ধড় ফড় এর কারণ

গর্ভবতী নারীর তিন মাস পর গর্ভস্থ শিশু বড় হতে থাকলে ক্রম বর্ধমান জরায়ু বুকের মধ্যস্থদাকে চাপ দেই ও এটি তখন ফুসফুসে কে চাপ দিতে থাকে। তাই গর্ভবতী নারীরা খুব দ্রুতই হাঁপিয়ে ওঠেন। সামান্য সিঁড়ি ভাঙলে,  হাটাহাটি করলে বা বেশি কাজ করলে অল্পতেই সে হাঁপিয়ে যাবে। এই কারণটির জন্যই গর্ভবতী নারীর বুকের ভিতর ধড় ফড় করে।

গর্ভাবস্থায় এই হাঁস ফাঁস বা শ্বাসকষ্ট থেকে আরাম পেতে হলে আপনি যে অবলম্বন গুলো করতে পারেন  সেগুলো হলো:-

১,রাতে ঘুমানোর সময় বাড়তি বালিশ ব্যবহার করে মাথার দিকে একটু উঁচু করে রাখবেন।

২,পিঠ ও কাজ সোজা করে বসবেন, এতে ফুসফুস প্রচুর প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পাবে।

৩,শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম যোগব্যায়াম এই ব্যায়ামগুলো প্রতিনিয়ত করতে পারেন।

৪,একটু পরিশ্রম এই হাপিয়ে গেলে হাত দুইটা উপরের দিকে করে মেলে দিন, এতে পাঁজরের খাঁচার উপর চাপ কমবে অনেক বাতাস পাবেন।

৫.গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে এই সমস্যা গুলো অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন, এতে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজন বাড়াটাই স্বাভাবিক।আর আপনি প্রতিনিয়ত যদি এই সমস্ত কাজগুলো করেন তাহলে অবশ্যই আপনি এই বুক ধড় ফড় রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

শেষ কথা, উপরে লিখিত বিষয়টির সবকিছুই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে এতে করে যদি আপনাদের কোন কিছু জানতে এবং বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে আপনারা অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন। এবং ভালো করে বুঝে নিতে পারবেন। ধন্যবাদ।


পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
কোন মন্তব্য নেই
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার মন্তব্য জানান

দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না ।

comment url